আপনি কি লক্ষ্যহীন জীবন কাটাচ্ছেন আর যেনতেনভাবে প্রতিটি দিন পার করছেন? নাকি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সামনে রেখে পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন? মানুষের জীবনের লক্ষ্য প্রসঙ্গে কানাডার একদল গবেষক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন৷ তাঁদের মতে, লক্ষ্য থাকলে জীবনের আয়ু কয়েক বছর বৃদ্ধি পায়৷
সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বলা হয়, জীবনে বাড়তি কয়েকটি বছর প্রাপ্তির জন্যই একটি লক্ষ্য অনুযায়ী জীবন কাটানো ভালো৷ কানাডার কার্লটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক প্যাট্রিক হিল ও তাঁর সহযোগীরা ওই গবেষণা চালান৷ তাঁরা দেখতে পান, লক্ষ্যপূর্ণ জীবনে মানুষ সুস্থ থাকতে পারে, এমনকি বেশি বয়সেও৷ লক্ষ্যই মানুষকে বেশি দিন বাঁচতে সাহায্য করে৷
সুন্দর জীবনের জন্য লক্ষ্যের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা প্রচলিত রয়েছে৷ তবে গবেষকেরা এই প্রথম আয়ু বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পৃক্ত মানসিক ও সামাজিক প্রভাবকে আলাদা করেছেন৷ প্যাট্রিক হিলের গবেষণায় সহযোগিতা করেন রচস্টার বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক নিকোলাস টুরিয়ানো৷ এ ছাড়া ২০ থেকে ৭৫ বছর বয়সী মানুষদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত অপর একটি গবেষণার তথ্য-উপাত্তও বিবেচনায় নেন তাঁরা৷
প্যাট্রিক হিলের গবেষণায় বিভিন্ন বয়সী মানুষ তিনটি বিবৃতির ওপর ভিত্তি করে মতামত দেন৷ বিবৃতিগুলো হলো: ‘কিছু মানুষ উদ্দেশ্যহীন জীবন কাটায়, কিন্তু আমি সে রকম নই’; ‘প্রতিটি দিনকে একটি নতুন দিন হিসেবে গণ্য করে আমি জীবন যাপন করি এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবি না’ এবং ‘মাঝেমধ্যে মনে হয়, জীবনে যা যা করার ছিল, সবই করে ফেলেছি’৷
এসব বিবৃতির ওপর মতামত দিয়েছিলেন যাঁরা, ১৪ বছর পর তাঁদের ৯ শতাংশেরই মৃত্যু হয়৷ আর যাঁরা বেঁচে আছেন, তাঁরা জীবনের লক্ষ্য বিষয়ে বেশ সচেতন৷ এ ব্যাপারে সব বয়সীদের মধ্যে মিল রয়েছে৷ তবে তুলনামূলক বেশি বয়সী ব্যক্তিদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি৷ কর্মক্ষেত্র থেকে অবসরগ্রহণকারী ব্যক্তিদের মধ্যে এই ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি৷ হিলের মতে, তরুণদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত প্রায় একই রকমের৷ তাঁরা বেশি বয়সে পৌঁছে যেকোনো পর্যায়ে একটি লক্ষ্য খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনা রাখেন৷
গবেষকেরা এই প্রথম মানুষের অবসরগ্রহণ, সামাজিক যোগাযোগ, স্বাস্থ্যের অবস্থা ইত্যাদি প্রভাবক বাদ দিয়েই পরিপূর্ণভাবে জীবনের লক্ষ্য এবং আয়ুর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন৷ তবে জীবনের লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গে আয়ু বৃদ্ধির বিষয়টি কীভাবে নির্ধারিত হয়, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি গবেষকেরা৷
প্রতিটি দিন বাঁচুন আনন্দে বর্তমানকে উপভোগ করে
আমাদের মগজ সব সময় আমাদের চিন্তাকে জাগ্রত রাখে। কখনো বর্তমানকে নিয়ে চিন্তায় থাকি, কখনোবা ভবিষ্যৎ নিয়ে। এই চিন্তা যে সব সময় নেতিবাচক তাও কিন্তু নয়। তবে এই চিন্তায় চিন্তায় আমরা বর্তমানের আনন্দময় সময়টাকেও ভাবনার অতল সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছি। এই যেমন আপনি আপনার বন্ধুর জন্মদিনের আয়োজনে গেলেন, সেখানে সবাই অনেক আনন্দ করলেও আপনি হয়তো ভাবছেন আপনার মা ঠিকমতো ঔষধ খেয়েছে কিনা কিংবা অফিসের কাজে আপনাকে বাইরে যেতে হবে তখন পরিবারের দেখভাল কেমন করে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এমনটা শুধু আপনি নন, আমরা সবাই কমবেশি এরকম। আমরা যে যেখানে থাকি না কেন সেই সময়টাকে আমরা উপভোগ করতে পারি না। আমরা নানারকম চিন্তায় আচ্ছন্ন হই, ভাবনার সুতোয় এক এক করে ভাবতে থাকি অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ। আর এসব করতে গিয়ে আমরা এমন মুহুর্ত গুলোকে আমাদের থেকে হারিয়ে ফেলছি যেগুলো হতে পারতো সারা জীবন মনে রাখার মতো।
বর্তমানকে কাজে লাগানো বা Living in moment এটি সম্পূর্নই একটি অনুশীলনের বিষয়। রুটিন জীবন-যাপন কিংবা কাজ হাতে ফেলে না রাখলেই আনন্দে বাঁচতে পারেন সহজে। প্রতিটি দিন বাঁচুন আনন্দে বর্তমানকে উপভোগ করে।
সুন্দর ভবিষ্যতের জন্যই বর্তমানকে উপভোগ করুন: আপনি যদি একটি সাজানো ভবিষ্যত চান তাহলে আপনার বর্তমানকে আগে সাজাতেই হবে। বর্তমান থেকেই ভবিষ্যতের ভীত রচিত হয়। অতীতের ব্যর্থতার কথা ভেবে বর্তমানের কাজকে হেলায় ফেলে রাখা বা বিলম্বিত করা ভবিষ্যতে আপনাকে পেছনের দিকে টেনে ধরবে। সুতরাং বর্তমানকে, কাজকে, নিজেকে উপভোগ করুন।
মনোযোগ ফিরিয়ে আনুন: যখনই মনে হচ্ছে আপনি বর্তমান থেকে হারিয়ে ভাবনায় ডুবে যাচ্ছেন তখনি সচেতনভাবে বর্তমানের কাজে নিজেকে ফিরিয়ে আনুন। কাজের চাপ, ট্রেস এই সমস্যাগুলো জীবনে থাকবেই আর যখনি আপনি বর্তমানের কাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছেন বলে মনে হবে তখনি একশ থেকে এক পর্যন্ত উলটা গুনে দেখতে পারেন। এটা অনেক প্রাচীনও কার্যকরী পদ্ধতি। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করুন সকল দুশ্চিন্তা থেকে এই সময়টা দূরে ছিলেন আপনি!
ক্যারিয়ারের চিন্তা এড়াতে বর্তমানে ফোকাস করুন: ক্যারিয়ার নিয়েও সবাই কম বেশি ভাবনায় থাকে আবার এমন মানুষ অনেক আছেন যারা সারাক্ষণ দুশ্চিন্তায় থাকেন। কিংবা কবে যেন অসুস্থ্য হয়ে পড়েন সেই সময়ের জন্য টাকা জমানো দরকার। অথবা বৃদ্ধ বয়সে যদি দেখার কেউ না থাকে তাহলে তখন কি হবে! আজ থেকেই সেই সময়ের সব খরচ গোছাতে শুরু করেন অনেকে। আরে ভাই কতদিন বাঁচবো এটা কে জানে? কথায় আছে – আগামীকাল কে দেখেছে? বর্তমানে প্রতিজ্ঞ হোন, সব সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
পারফর্মেন্স ভাল করার জন্য সেটার কথা ভাবা বন্ধ করুন: আপনাকে মঞ্চে ডাকা হলো সবার উদ্দ্যেশে কিছু বলার জন্য কিন্তু আপনি যদি ভাবতে থাকেন এখন আমি মঞ্চে গিয়ে কি বলবো, আমাকে কি না ডাকলেই হতো না! তবে এখনি এসব ভাবনা বন্ধ করে দিন কারণ মঞ্চে গিয়ে আপনার মুখ বন্ধ হয়ে যাবার জন্য এই নেতিবাচক চিন্তাই যথেষ্ট। সুতরাং ঠান্ডা মাথায় সময়কে মোকাবেলা করুন।
সবসময় নতুনকে লক্ষ্য করুন: প্রায়শই আমাদের এমন হয় একটা বই পড়ছি তখন হঠাৎ খেয়াল করলাম আগের পৃষ্ঠায় কি লেখা ছিল মনে করতে পারছি না। একই রাস্তায় আগে গেছি কিন্তু ফেরার পথে আর এক্সিট পয়েন্ট মনে করতে পারছি না। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে Mindlessness বলা হয়। এই সমস্যা কাটানোর সহজ উপায় হল যে কোন নতুন জিনিস খেয়াল করুন অর্থাৎ নতুন জিনিসকে ক্লু বা তথ্য হিসেবে কাজে লাগান। যেমন বইয়ের আগের পৃষ্টার নতুন কোন শব্দ বা ইউনিক কোন কিছু মাথায় ঢুকিয়ে নিন। এই চর্চা আপনাকে বর্তমানে থাকতে সাহায্য করবে।
হাল না ছেড়ে মোকাবেলা করুন: আমরা জীবনে চলার পথে সমস্ত সমস্যাগুলো মোকাবেলা করি না, অনেক সময় সমস্যার সমাধান করে এড়িয়ে যাই। পরবর্তীতে এই সমস্যাই আমাদের সামনে আবার ফিরে আসে আরো কঠিন হয়ে। সমস্যা যতই কঠিন হোক সকল সমস্যার সমাধান আছেই। সাহসের সাথে মোকাবেলা করুন, আপনাকে আর কে আটকায়!
হয়ে উঠুন আশাবাদী মানুষ
আশাবাদী একজন মানুষ হয়ে ওঠা কি খুব কঠিন? সত্য হচ্ছে- হ্যাঁ, কঠিন। তবে বেঁচে থাকার জন্য আশাবাদী মানুষ হয়ে ওঠাটা মনে হয় খুব জরুরী। জীবন মানেই তো আশা, এই পৃথিবী টিকে আছে সেই আশার ওপরেই। জীবনের বিফলতা আর পরাজয়ের কষ্ট আপনার মন থেকে মুছে দিতে পারে কেবল আশাবাদী মনোভাব।
ধন্যবাদ বলা শিখুন: উপকারীর উপকার স্বীকারে আজকাল আমাদের ভারি অনীহা, পাছে উপকারী ব্যক্তিটি আবার ভাব নিয়ে ফেলে! ব্যাপারটি কিন্তু আসলে তেমন নয়। আপনি যদি আপনার জীবনের অর্জনগুলো এবং এর পেছনের মানুষগুলোকে অবদানকে স্বীকার করে না নেন, তবে আপনি কিন্তু প্রকারন্তরে নিজের অর্জনগুলোকেই মাটিচাপা দেবার ব্যবস্থা করছেন। আর দীর্ঘমেয়াদে যা হবে- আপনি আপনার অর্জনগুলো থেকে তৃপ্তি খুঁজে পাবেন না। ধন্যবাদ বলতে শিখুন, দিন ভালো কাজের স্বীকৃতি। ফলাফল হিসেবে মানুষ ও আপনার ভালো কাজের কদর করবে আর আপনি পাবেন আরো ভালো কিছু করার অনুপ্রেরণা।
শেয়ার করুন: অন্যর উত্তাল সাগর পাড়ি দেবার কাহিনী শুনে মানুষ বরাবরই স্বপ্ন দেখেছে সাগর জয়ের। ক্রান্তি লগ্নগুলোতে মানুষ সবসময়ই ইতিহাসের নায়ক কিংবা বিশ্বাসঘাতকদের কথা স্মরণ করেছে, শিক্ষা নিয়েছে। আর এভাবেই ইতিহাস এসে বরাবরই বর্তমানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গেছে। নিজের জীবনের গল্প/ অর্জনগুলো (এমনকি ব্যর্থতার ইতিহাসও) শেয়ার করুন কাছের মানুষদের সাথে। আজ আপনি যে পাহাড় পাড়ি দিচ্ছেন, কাল হয়তো সেখানে অন্য একজন আসবে। নতুন প্রজন্মের সেসব ওয়াসফিয়া আর মুসাদের জন্য না হয় কিছু গল্প রেখে যান। আপনার এই গল্পগুলোই হয়তো তাদের আশা যোগাবে, আর মানুষের জীবনে আশার গুরুত্বের কথা কে না জানে। সভ্যতার ইতিহাসে মানুষ যতবারই তার সামনে এগিয়ে যাবার পথ রুদ্ধ পেয়েছে, আশাই প্রতিটি বার মানুষকে সামনে এগিয়ে যাবার পথ করে দিয়েছে।
ক্ষমা: অনেকে অপেক্ষা করেন সময়ের জন্য, সময় নাকি সবকিছু ভুলিয়ে দেয়। এই করতে গিয়ে কিন্তু আমরা ক্ষমার মত চমৎকার গুণটির কথা ভুলে যাই। টকটকে লাল নবীন সূর্যের সামনে দাড়িয়ে বিগত রাতের দুঃস্বপ্নের কথা ভাবার কোন মানে হয়! তার চেয়ে বরং ভাবুন স্রষ্টার দেয়া এমন অপূর্ব মুহূর্তটির কিভাবে সবচেয়ে ভালো ব্যবহার করা যায়। একেবারেই যদি না পারেন তবে মুখে ক্ষমা করে দিন, অন্তরে যত ব্যথা থাকুক। দেখবেন নতুন করে শুরু করার অনুপ্রেরণা পাচ্ছেন।
নন্দঘোষ নন হিংসাই যত গণ্ডগোলের মূল: কোন বন্ধু বা শত্রুর সাফল্যের খবর পেয়ে আমাদের বুক যখন টনটন করে, তখন কিন্তু সেই বন্ধু বা শত্রুটির কিছু যায় আসেনা, বরং ব্যথাটা অনুভূত হয় কেবল আমাদের বুকের ভেতরেই। আরেকজনের সাফল্যে কষ্ট না পেয়ে বরং পরিশ্রম করুন। কাউকে হিংসা করতে গিয়ে যে শক্তি আর সময়টুকু ব্যয় করছেন, সেটি বরং ব্যয় করে ফ্রেঞ্চ ভাষা শিখে ফেলুন।
Be a positive forward thinker: আকাশজোড়া কালো মেঘ দেখে অনেকেই থমকে যান, মন খারাপ করেন। আশাবাদী মানুষরা কিন্তু সেই বিপুল মেঘের কোনায় জমে থাকা একবিন্দু আলো খুঁজে পান। অপারেশন টেবিলে রোগীর কতোই না কষ্ট আর আতংক। কিন্তু ভাবুন সে অপারেশন শেষ হলেই কিন্তু রোগীটি কতগুলো কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যাবেন।
ব্লেম গেম: দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমাদের রাজনীতিবিদরা ক্ষমতায় আরোহণ, ধরে রাখা কিংবা ক্ষমতা থেকে প্রতিপক্ষকে নিচে নামানোর জন্য ব্লেম গেম নামক প্রক্রিয়াটির সর্বাধিক ব্যবহার করে থাকেন। এক দল অপরটির চেয়ে কত খারাপ- সেটি দিয়েই আমরা যেন নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগের কাজটি সেরে নিচ্ছি। ব্লেম গেমের সবচেয়ে ক্ষতিকর দিক হচ্ছে- এতে ব্যক্তিগত উন্নয়ন তো বাধাপ্রাপ্ত হয়ই, সামগ্রিক উন্নয়নেরও একেবারে বারটা বেজে যায়। অন্যের ভুল হলে সেটি ধরিয়ে দেয়া অনেকক্ষেত্রে জরুরী, তবে দুঃখজনকভাবে আমরা অনেকে এ কাজটি করি যাতে অপরের ব্যর্থতার আড়ালে আমাদের নিজ নিজ সীমাবদ্ধতা আর ব্যর্থতার চিত্রগুলো ঢাকা পড়ে যায়। স্বীয় ভুল আড়াল না করে বরং স্বীকার করে নিন, এটি বরং দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে আরো বেশি শিখতে এবং উন্নতি করতে সাহায্য করবে।
Unplug yourself: আমাদের হাতে সময় কম, কাজ অনেক বেশি। গোঁয়ারের মত না খেটে কাজ করুন স্মার্টভাবে। একেবারে কাজে ডুবে যাওয়াও কোন কাজের কথা নয়। চেষ্টা করুন প্রতিদিন কিছু হলেও শারীরিক পরিশ্রম করতে। পাশের পার্কে গিয়ে দশ মিনিট চুপচাপ বসে থাকুন, ফোন বন্ধ করে দিন, তারপর সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে শুধু গাছপালা দেখুন। সপ্তাহে অন্তত একটি দিন হলেও নিজের জন্য বাঁচুন, সুযোগ পেলে চলে যান নদীর পাড়, সাগর কিংবা সবুজে। কর্মজীবনের ব্যস্ততার ফাকে এমন কিছু কিছু ছোট বিরতি আপনাকে পরবর্তীতে আবার দ্বিগুণ উদ্যমে কাজে ফিরতে সাহায্য করবে।
বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
চিকিত্সাবিজ্ঞানের উন্নতি ও স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধির ফলে বিশ্বব্যাপী মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একজন মানুষ দীর্ঘ জীবন লাভ করতে পারে স্রেফ সাতটি স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ মেনে চললে।
বেশি বেশি হাসুন: মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে। আর মন ভালো থাকার প্রতিক্রিয়া হচ্ছে ‘হাসি’। আসলে হাসি আমাদের শরীর ও মনকে প্রসন্ন করে। আমাদের মানসিক উত্তেজনা কমায়, শরীরের রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমরা যখন যে অবস্থাতেই থাকি না কেন প্রতিদিন প্রচুর হাসতে হবে। হাসির কোনো কারণ নেই? তবুও হাসুন।
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন: একটি কথা প্রচলিত আছে ‘দীর্ঘজীবন চাইলে বেশি বেশি পায়চারি করুন’। নিয়মিত শরীরচর্চা আমাদের শরীর সুন্দর ও সুঠাম রাখে এবং শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীরচর্চা হিসেবে পায়চারি করা, আস্তে দৌড়ানো, থাইজি মুষ্টিযুদ্ধ, শরীরগঠনমূলক ব্যায়াম ও ইউগা ইত্যাদি ভালো।
ধূমপান থেকে বিরত থাকুন: ধূমপান আমাদের শরীরের কোনো উপকার করে না, শুধু অপকারই করে। বাংলাদেশের একজন নামকরা চিকিত্সককে একবার টিভিতে বলতে শুনেছিলাম যে, ধূমপানের ফলে পায়ের নখ থেকে শুরু করে মাথার চুল পর্যন্ত হেন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নেই যা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। গবেষণায় প্রমাণিত যে, ধূমপানের সময় শরীরের স্বাভাবিক রক্তচলাচল বাধাগ্রস্ত হয়। তাই ধূমপায়ী মানুষ সহজেই হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তা ছাড়া, যারা ধূমপান করেন তাদের ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা অনেক বেশি। পরোক্ষ ধূমপানের ক্ষতিও কম নয়। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, পরোক্ষ ধূমপানের ফলে বিশেষ করে শিশুরা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। অস্ট্রেলিয়ার তাসমানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষক বলেছেন, ‘‘যেসব বাবা-মা নিজ শিশুসন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেন, তাদের উচিত ধূমপান পুরোপুরি ত্যাগ করা।”
দৈনিক অন্তত ২ লিটার পানি পান করুন: পানির অপর নাম জীবন। আপনি কি প্রতিদিন যথেষ্ট খানি পান করে থাকেন? বিশেষজ্ঞের মতামত হলো, একজন সুস্থ মানুষের প্রতিদিন আট গ্লাস পানি পান করা উচিত। আট গ্লাস পানির পরিমাণ দাঁড়াবে মোটামুটি ২ লিটার। পর্যাপ্ত পানি আমাদের শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয়। পর্যাপ্ত পানি হৃদরোগ ও রক্তনালীর রোগ প্রতিরোধে স্পষ্ট ভূমিকাও পালন করতে সক্ষম।
প্রতিদিন এককাপ দই খান: দইয়ের মধ্যে সমৃদ্ধ প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ‘এ’ ‘ই’ ও ‘সি’ ছাড়াও শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন উপাদান থাকে। দই শরীরের ক্যালসিয়ামের অভাব দূর করে। দই মানুষের বার্ধক্যকে বিলম্বিত করতে পারে। আর দই খাওয়ার সবচেয়ে ভালো সময় হচ্ছে রাতের খাবারের আধ ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে। অতএব নিয়ম করে প্রতিদিন দই খান।
দৈনিক এককাপ গ্রিন টি খান: আপনি জানেন কি, সবুজ চা বা গ্রিন টির মধ্যে সমৃদ্ধ ভিটামিন সি ও অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে? এসব উপাদান উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও ক্যানসারসহ অনেক রোগের প্রতিরোধে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে। তবে যাদের পাকস্থলীতে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে বা যাদের পেটে ব্যথা হয় তাদের সবুজ চা না খাওয়া উচিত বলে চিকিত্সকেরা বলে থাকেন।
দৈনিক অন্তত ১টি কমলা খান: সব ফলের মধ্যে কমলা মধ্যে ভিটামিনের পরিমাণ সবচে বেশি থাকে। এ ফল আমাদের শরীরের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ ভালো। শরীরের ক্ষতিকারক পদার্থ নির্মূলে কমলার ভূমিকা অনেক। কমলা ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের দেওয়া এই ৭টি মূল্যবান পরামর্শ নিয়মিত মেনে চললে আশা করা যায় যে আপনি সুখি, সুন্দর ও দীর্ঘজীবন লাভ করবেন।
কমেন্টস করুন